ডুম্বুর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার গেন্ডাছড়াতে অবস্থিত |ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে জলাশয়টির দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার |এটির আকৃতি ভগবান শিবের ডুম্বুর এর মতো |তাই এর নাম হয়েছে ডুম্বুর |এর আয়তন ৪১ বর্গ কিলোমিটার |এই বিশাল জলরাশিকে ঘিরে সবুজের সমারোহ , চোখকে তৃপ্ত করতে বাধ্য |
প্রায় ৪৮ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই জলাশয় | একটা হাইডেল প্রজেক্ট আছে ,যেখান থেকে গোমতী নদীর উৎপত্তি হয়েছে |জায়গাটি তীর্থমুখ বলে সুপরিচিত | যেখানে প্রতিবছর ১৪ই জানুয়ারী বিখ্যাত পৌষ সংক্রান্তি মেলা হয় | শীতকালে নানারকম অতিথি পাখির আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায় |এটি নানারকম মাছের জন্য ও বিখ্যাত |
আমরা ডুম্বুর জলাশয়ে গিয়েছিলাম ২০শে ফেব্রুয়ারী ২০২১|সকাল ৭টা বাজে আমরা ৩ জন ,আমি, চিরঞ্জীব আর জয়দাদা রওয়ানা হলাম ডুম্বুর এর উদ্দেশ্যে |ঘন্টা ২ পরে রাস্তাতেই প্রাতঃরাশ সেরে,চলতে থাকলাম ডুম্বুর এর রাস্তা ধরে |আঁকাবাঁকা রাস্তার মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছুটছিল |
সকাল ১০ :৪৫ মিনিটে আমরা তীর্থমুখ পৌঁছালাম |মন্দিরে প্রণাম করে আমরা গোমতী নদীর উৎস মুখ দেখতে গেলাম |অসাধারণ জায়গাটা ! জল পড়ার প্রচন্ড শব্দ মূহর্তের মধ্যে সব ক্লান্তি কর্পূর এর মতো উধাও করে দিলো |
জায়গাটার অনেক ছবি , রেকর্ডিং নিলাম |তারপর রওয়ানা হলাম ডুম্বুর এর উদ্দেশ্যে | এখান থেকে ডুম্বুর এর দূরত্ব ৪০ মিনিটের মতো |ডুম্বুর পৌঁছে খেয়া ঘাটে যেয়ে নৌকা ভাড়া করলাম | ইঞ্জিনের নৌকা ছিল ,মানুষ আমরা ৩জন আর মাঝি ২জন | বিস্তীর্ণ জলরাশি বেয়ে আমাদের নৌকা ছুটলো নারকেল কুঞ্জ দ্বীপের দিকে |
কি যে ভালো লাগছিলো তা লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা |নৌকায় বসে দেখতে থাকলাম অগনিতো সবুজের সমারোহ |কখনো বা আবার ছোট ছোট দ্বীপ |দ্বীপের লোকজন বাড়ির কাছে থেকেই মাছ উঠাচ্ছিলো !!!
কেউবা আবার নৌকায় চেপে জ্বালানি সংগ্রহ করছিলো |মাঝে মধ্যে সাদা বকপাখিকে উড়ে যেতে দেখলাম ,হয়তোবা আমাদের নৌকার আওয়াজ এ |কেউবা আবার ঠায় বসে মাছ ধরছিল |আমি নৌকার একদম সামনে বসে হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছিলাম |
ঠান্ডা বাতাস আর এমন নিঃস্তব্দতা ভীষণ উপভোগ করছিলাম | এভাবে নৌকায় ভেসে যেতে যেতে দেখলাম নারকেল গাছ দিয়ে ঢাকা ১টা দীপ |বেশ লাগছিলো দেখতে |বুঝতে পারলাম এটাই আমাদের গন্তব্য নারকেল কুঞ্জ |
নৌকা যত কাছে গেলো ততোই স্পষ্ট হতে থাকলো সারি সারি নারকেল গাছের দল |একসময় নারকেল কুঞ্জের ঘাটে নৌকা ভিড়লো |আমরা নৌকা থেকে নেমে টিকিট কেটে ভেতরের দিকে গেলাম |ভেতরে ঢুকতেই শীতল হাওয়া আর পাখিরা কিচির মিচির করে আমাদেরকে স্বাগত জানালো |আমরা এগোতে থাকলাম ওয়াটার স্পোর্টস এর দিকে |তালিকা দেখে জেট স্কি করবো বলে স্থির করলাম |শান্ত জলে জেট স্কির অভিজ্ঞতা এই প্রথম নিলাম |বেশ লাগছিলো |
জেট স্কি সেরে আমরা ৩জনে জমিয়ে ঘন্টা দুয়েক আড্ডা দিলাম |আবহাওয়াটা বেশ মনোরম ছিল |রোদ ও ছিলোনা আবার বৃষ্টি ও না |তারপর দুপুরের খাবার খেলাম |
মেনু ছিল গোদক (ত্রিপুরার বিশেষ খাবার ),রুই মাছ (ডুম্বুর জলাশয়ের ), শুকরের মাংস (ত্রিপুরার রাজকীয় খাবার ),মুরগির মাংস|আমার সব থেকে ভালো লেগেছে গোদক |নৌকার মাঝি ফেরার জন্য তাড়া দিচ্ছিলো |ফেরার পথে কুল কূড়ালাম |অনেক সুস্বাদু ছিল কুলগুলু | সাথে করে কিছু কুল নিয়ে এলাম |
তারপর নৌকায় চেপে বসলাম ফেরার জন্য |ফেরার পথে বিকেল হয়ে গিয়েছিলো |এরকম শান্ত বিকেলে সবুজের বুক চিরে আমাদের নৌকা ভেসে চললো ঘাটের দিকে |যেতে যেতে দেখলাম পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া |দ্বীপের লোকজন বাড়ির আঙিনায় গল্প করছে জটলা পাকিয়ে |
কেউবা গৃহস্থালির কাজকর্ম সাড়ছে |ছোট ছোট নৌকা নিয়ে অনেকে মাছ ধরছে|এরকম দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে ঘাটে চলে এলাম আমরা ! ঘাটে নৌকা থেকে নেমে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম |সাথে করে নিয়ে এলাম স্নিগ্ধ ভালোলাগা|
2 replies on “ডুম্বুর জলাশয়ে একদিন”
I’ve read several just right stuff here. Certainly worth bookmarking for revisiting. I wonder how much attempt you set to create this type of magnificent informative website.
Reading your article helped me a lot and I agree with you. But I still have some doubts, can you clarify for me? I’ll keep an eye out for your answers.