আমি আর চিরঞ্জীব বেড়াতে গিয়েছিলাম দার্জিলিং শহরে | সুউচ্চ পাহাড়ে ছোট ১টা শহর দার্জিলিং |শহরটির অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে |শহরটি টয় ট্রেন , মহাকাল মন্দির, রক গার্ডেন , চিড়িয়াখানা ইত্যাদি নানারকম দর্শনীয় স্থান আছে |আমরা এগুলার অনেকটাই দেখেছি আবার অনেকটা দেখিনি | কি দেখেছি ,কি করেছি সেগুলো লিখে সবার সাথে আনন্দটা ভাগাভাগি করছি|
আমরা দার্জিলিং ভ্রমণ এ যাই ত্রিপুরা থেকে |২৬শে ডিসেম্বর সকালবেলা আমাদের আগরতলা থেকে কলকাতা ফ্লাইট ছিল |আমরা সকাল ৭ :৩০ মিনিটে ঘর থেকে বের হলাম |আগরতলা বিমানবন্দর পৌঁছালাম সকাল ৮টা বাজে বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকে লাগেজ স্ক্রীনিং করলাম |লাগেজ দিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে কিচ্ছুক্ষন অপেক্ষা করলাম |নির্ধারিত সময়ে সিকিউরিটি করে তারপর আরো কিচ্ছুক্ষন অপেক্ষা করলাম বোর্ডিং শুরু হওয়ার জন্য |বোর্ডিং শুরু হওয়ার পর ফ্লাইট এ উঠলাম এবং ইন্ডিগো উড়ান যথাসময়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে উড়লো |
আমরা কলকাতা পৌছালাম ১০:৫০ মিনিটে | যেহেতু আমাদের ইন্ডিগো থেকে কানেকটিং ফ্লাইট ছিল বাগডোগরা তাই আর লাগেজ নিতে হলোনা |আমরা ফ্লাইট থেকে নেমে পরবর্তী বাগডোগরা ফ্লাইট আর জন্য সিকিউরিটি করে নিলাম |অতঃপর আমরা বিরিয়ানি খেলাম |আহা! কি স্বাদ|
কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে থাকলাম বাগডোগরার ফ্লাইট বোর্ডিং এর জন্য |অল্প কিছুসময়ের মধ্যে বোর্ডিং শুরু হলে আমরা বোর্ডিং করে ফ্লাইট এ বসলাম |ইন্ডিগো উড়ান আবারো যথাসময়ে উড়ে গেলো বাগডোগরার উদ্দেশ্যে |
ঠিক ১ ঘন্টা পর আমরা বাগডোগরা পৌঁছালাম|লাগেজ সংগ্রহ করে ,গাড়িতে চেপে দার্জিলিং এর রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম | আমরা উইজরাইড থেকে ,এসইউভি আইনোভা বুক করে রেখেছিলাম ২দিন আগে থেকেই |এখানে আমি গাড়ির নাম যে কারণে উল্লেখ করলাম, সেটা হলো পাহাড়ি রাস্তায় বড়গাড়ি কিছুটা হলেও আরামদায়ক |আর উইজরাইড নামটা উল্লেখ করলাম ,কারণ , উইজরাইড থেকে আমরা আগে কনফার্মেশন করে রেখেছি |এয়ারপোর্ট পৌঁছে, আমরা চালকের ফোন নম্বর ,নাম পেয়ে গেছি| চালক ও ফোন করে কন্ফার্ম করেছে, সে অপেক্ষা করছে |
অগ্রিম ,অনলাইন বুক করে রাখলে একদম হোটেল এর নাম ,ঠিকানা দিয়ে বুক করা যায় | ট্র্যাক রাখা যায় | দার্জিলিং যেয়ে, যেকোন জায়গায় গাড়ি নামিয়ে দেবেনা |শুনেছিলাম অনেক সময় বাগডোগরা থেকে অফলাইন গাড়ি নিলে , ঘুম স্টেশন এ নামিয়ে বলে, দার্জিলিং এসে গেছে ,নেমে পড়ুন |আর দার্জিলিং এ পাহাড়ি রাস্তা খুব উঁচু উঁচু |নিজে হেঁটে উঠতে হাপিয়ে যেতে হয় (স্ট্যামিনার উপর নির্ভর করবে )|তারমধ্যে যদি আবার লাগেজ টেনে উঠতে হয় ! ভাবা যায়! কতটা এডভেঞ্চার হয়ে যাবে !!!
আমাদের ড্রাইভার এর নাম ছিল ভীম|দারুন মানুষ সে |আমাদের তথ্য দিয়ে খুব সাহায্য করেছে |সে আমাদের বাগডোগরা থেকে দার্জিলিং ভ্রমণ কে দারুন উপভোগ্য করেছে |এতো আঁকাবাঁকা উঁচু উঁচু রাস্তা !আমি তো ভয়ে গুটিয়ে ছিলাম রাস্তা দেখে |সে বললো ,একদম ভয় পাবেন না ম্যাডাম |এই রাস্তা আমার অতি সুপরিচিত |আমার বাড়ি দার্জেলিং | আমি রোজ ২ -৩ বার আসা যাওয়া করি |অল্প হলেও আস্বস্ত হলাম |
ভীম রাস্তাতেই ভালো ১টা স্থানীয় খাবারের রেস্টুরেন্ট দেখে থামালো |আমরা থুকপা খেলাম | খুব সুস্বাদু ছিল |
রাস্তায় যেতে যেতে অনেক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়লো |কত গাছপালা ঢেকে আছে পাহাড়কে |কোথাও আবার বাজার বসেছে|লোকজন বাজার করছে|সন্ধ্যা নামছিলো একটু একটু করে|গাড়ি থামিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দাঁড়ালাম |ধীরে ধীরে সূর্য্যি মামা ডুব দিলো পাহাড়ের কোলে|উফ কি অসাধারণ ছিল দেখতে !
আমরা আমাদের গেস্ট হাউস এর পথ ধরে এগোতে থাকলাম|চলতে চলতে ৭টা নাগাদ আমাদের গেস্ট হাউস এ পৌঁছালাম|গেস্ট হাউস এর লোকজন খুব আন্তরিক ছিল|আমাদের যাবতীয় ফর্মালিটিজ খুব সাবলীল ভাবে সম্পন্ন হলো|
এরমধ্যে ই হাঁড়কাঁপুনি ঠান্ডা অনুভব করলাম|দ্রুত হাতমুখ ধুয়ে বিছানামুখী হলাম|আমাদের উষ্ণ রাখতে রুম হিটার ও ৩টা কম্বল সাহায্য করলো|কিছুক্ষণবাদে খাবারের তালিকা বের করে রাতের খাবার আর ২টা দার্জিলিং চা অর্ডার করলাম|মিনিট দশেক পরেই দার্জিলিং চা হাজির |আহা! চা পেয়ে কি খুশি আমরা|চা পান করতে করতে গল্পে মশগুল হলাম|ভালোলাগা অসাধারণ|
৯টা বেজে ৩০মিনিটে আমাদের রাতের খাবার হাজির | খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পরলাম|৫ :৩০মিনিটে নাগাদ আমাদের ঘুম ভাঙলো |মাথার পাশের পর্দা সরাতে দেখলাম , হালকা আলোতে দূরে অনেকটা জায়গা নিয়ে সাদা হয়ে থাকা পর্বত|আমি চিরঞ্জীব কে ডেকে বললাম , দেখতো এটাই কি সেই বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘা ? যার সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে থাকে ! চিরঞ্জীব দেখে বললো , হ্যাঁ, এটাই সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা |তারপর সকাল ৮টা পর্যন্ত আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা কে দেখলাম | কখনো লাল , কখনো হলুদ ,আবার কখনোবা সাদা | অতি মুগ্ধ হতে থাকলাম প্রতিটি রূপে | অসাধারণ সৌন্দর্য্য,এখনো চোখে লেগে আছে |
চা পান করে ,সকাল ১০টা নাগাদ বেরিয়ে পরলাম গ্লেনারিজ এর উদ্দেশ্যে |পাহাড় বেয়ে এঁকেবেঁকে নেমে, গ্লেনারিজ এ পৌঁছে ,ঘন্টা খানেক লাইন দেয়ার পর, টেবিল পেলাম |আমাদের ভোজন সারলাম বারান্দার কোণার টেবিল থেকে |আশেপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়ের কোলে দাঁড়ানো ঘরগুলো , পুরো দৃশ্যটাই যেন শিল্পীর তুলির আঁচড় |
3 replies on “দার্জিলিং এর স্মৃতিলিপি(প্রথম খন্ড)”
For my thesis, I consulted a lot of information, read your article made me feel a lot, benefited me a lot from it, thank you for your help. Thanks!
Very nice post. I just stumbled upon your blog and wanted to say that I’ve really enjoyed browsing your blog posts. In any case I’ll be subscribing to your feed and I hope you write again soon!
Cool. I spent a long time looking for relevant content and found that your article gave me new ideas, which is very helpful for my research. I think my thesis can be completed more smoothly. Thank you.